জয়পুরহাট বাজারে পাটের চাহিদা বেড়েছে
জয়পুরহাটে এবার পাট চাষে কৃষকদের সোনালি দিন ফিরেছে। বাজারে পাটের চাহিদা বেড়েছে। একই সঙ্গে পাটের মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে। বর্তমানে তারা পুকুর ও ডোবায় পাট জাগ দেওয়ার, ধোয়ার ও শুকানোর কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন। চলতি মৌসুমে পুকুর ও ডোবায় পর্যাপ্ত পানি থাকার কারণে পাট জাগ দেওয়ার ক্ষেত্রে কৃষকদের কোনো সমস্যা হয়নি। এতে পাটের উৎপাদন কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে চলছে। খবর বাসসের।
স্থানীয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪-২৫ ফসল উৎপাদন খরিপ-১ মৌসুমে জয়পুরহাটে পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ৩ হাজার ২২০ হেক্টর জমিতে। কিন্তু এই মৌসুমে ২ হাজার ৮৮০ হেক্টর জমিতে পাট চাষ করা হয়েছে। এর মধ্যে দেশি পাটের চাষ হয়েছে ১৫ হেক্টর জমিতে ও তোষা পাটের চাষ হয়েছে ২ হাজার ৮৬৫ হেক্টর জমিতে। এবারের মৌসুমে পাট উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৪৬ হাজার ৭২০ বেল।
সরকারের পক্ষ থেকে পাটজাত দ্রব্য ব্যবহারের বাধ্যতামূলক সিদ্ধান্ত, পাটের মূল্য বৃদ্ধি, জ্বালালি হিসেবে পাটকাঠির ব্যবহার ও মাটির উর্বরতা শক্তি বৃদ্ধির কারণে কৃষকরা পাট চাষে অধিক আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। কৃষি বিভাগ পাট চাষ সফল করতে কৃষকদের জন্য হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ, উন্নত জাতের পাট বীজ সরবরাহ ও প্রয়োজনীয় সারের মজুত যথাযথভাবে বজায় রাখছে। এই সব উদ্যোগের ফলস্বরূপ পাট চাষে নতুন উদ্যম ও উৎসাহ লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
গত মৌসুমে পাটের দাম প্রকারভেদে ২ হাজার থেকে ২ হাজার ৫০০ টাকা মণ ছিল। কিন্তু চলতি মৌসুমে নতুন পাটের দাম বেড়ে ২ হাজার ৭০০ থেকে ৩ হাজার টাকা মণ পর্যন্ত পৌঁছেছে। বাজারে পাটজাত দ্রব্যের ব্যবহার বৃদ্ধি পাওয়ায় পাটের চাহিদা অন্যান্য সময়ের তুলনায় অনেক বেশি। পুরানাপৈল বাজারের পাট ব্যবসায়ী সুশিল চন্দ্র মণ্ডল ও শাহনূর আলম জানান, পাটের বাজারে চাহিদার অস্বাভাবিক বৃদ্ধি ও দাম বৃদ্ধির ফলে কৃষকরা লাভবান হচ্ছেন।
মাটির উর্বরতা শক্তি বৃদ্ধি, পাটের বিভিন্ন ব্যবহার এবং পাটের ভালো দাম পাওয়ায় জয়পুরহাটে পাট চাষ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ রাহেলা পারভীন জানান, চলতি মৌসুমে ২ হাজার ৮৮০ হেক্টর জমিতে পাট চাষ হয়েছে ও অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতের কারণে পাট জাগ দেওয়ার ক্ষেত্রে কৃষকদের কোনো সমস্যায় পড়তে হয়নি। তিনি আশা প্রকাশ করেন, এই মৌসুমে ৪৬ হাজার ৭২০ বেল পাট উৎপাদিত হবে।
কৃষিবিদরা জানান, জয়পুরহাটের পাট চাষে এই সাফল্য শুধু কৃষকদের আস্থার পরিবর্তন করেনি বরং এটি এলাকার অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে। পাট চাষের এই নতুন দিগন্ত কৃষকদের জীবনে নতুন আশার আলো জাগিয়েছে। কৃষকরা এখন নতুন উদ্যমে চাষাবাদ চালিয়ে যাচ্ছেন এবং ভবিষ্যতে আরও ভালো ফলাফলের আশায় এগিয়ে যাচ্ছেন। পাটের সোনালি দিনগুলো কৃষি ক্ষেত্রের অগ্রগতির এক নতুন অধ্যায় সূচিত করছে।