সালাহউদ্দীন আইয়ুবির আল-আকসা বিজয়
মিশর ও সিরিয়ার প্রথম সুলতান ও আইয়ুবীয় রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা আবু নাসির সালাহুদ্দিন ইউসুফ ইবনে আইয়ুব। যিনি সালাহুদ্দিন আইয়ুবি নামে প্রসিদ্ধ। আর অমুসলিমদের মাঝে তিনি সালাদিন বলে পরিচিত ছিলেন।
সালাহউদ্দীন আইয়ুবি (রহ.) শামে ইউরোপীয় ক্রুসেডারদের বিরুদ্ধে মুসলিম প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলেন। তার সালতানাতে মিশর, সিরিয়া, মেসোপটেমিয়া, হেজাজ, ইয়েমেন ও উত্তর আফ্রিকার অন্যান্য অংশ অন্তর্ভুক্ত ছিল।
মুসলমানদের প্রথম কেবলা
সালাহউদ্দীন ইউসুফ ইবনে আইয়ুবি ১১৩৭ সালে ইরাকের তিকরি নগরীতে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন ইসলামের গর্বিত এক সেনানায়ক। মুসলমানদের প্রথম কেবলা, অসংখ্য নবী-রাসূল, সাহাবি ও তাবেয়িদের স্মৃতিবিজড়িত ফিলিস্তিনের আল-আকসা জয় করেন। ১১৮৭ সালের ৪ এপ্রিল সংঘটিত হিত্তিনের যুদ্ধের মাধ্যমে তিনি সমগ্র বিশ্বে পরিচিতি লাভ করেন।
এ যুদ্ধে অনেক ইহুদি সেনা নিহত হওয়ায় ক্রুসেডাররা মারাত্মকভাবে পর্যুদস্ত হয়ে যায়। দুর্বল হয়ে পড়ে সৈন্যদের মনোবল। আর আসকালান ও গাজা চলে আসে মুসলমানদের কব্জায়। প্রিয় আকসা বিজয়ের লক্ষ্যেই মুসলিম বাহিনী বীরদর্পে লড়ছিলো। হিত্তিনের যুদ্ধ আল-আকসা বিজয়ের পথকে সুগম করে দেয়।
যুদ্ধের সূচনা
সালাহউদ্দীন আইয়ুবি (রহ.) জামালুদ্দিন শারবিন বিন হাসান রাজির নেতৃত্বে জেরুজালেম শহরের উপকণ্ঠে প্রেরণ করেন একদল জানবাজ মুজাহিদ। যুদ্ধের প্রস্তুতি গ্রহণের আগেই মুসলমানদের ওপর ক্রসেডাররা অতর্কিত আক্রমণ করলে সবাই ছিন্নভিন্ন হয়ে যায়। আমির জামালুদ্দিনসহ আরো অনেক মুজাহিদ শহিদ হন।
সালাহউদ্দীন আইয়ুবি (রহ.) এর কাছে এ সংবাদ পৌঁছলে তিনি ভীষণভাবে মর্মাহত হন। শহরে চূড়ান্ত আক্রমণের সিদ্ধান্ত নেন তিনি। দুর্গ রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর মিনজানিকের গোলাবর্ষণ শুরু করেন তিনি। মুষলধারে তীরও বর্ষণ করেন। গোলাবর্ষণের সঙ্গে সঙ্গে একদল জানবাজ মুজাহিদ সীমানা প্রাচীরের কাছে পৌঁছাতে সক্ষম হয়। তারা ১২ দিন জেরুজালেম অবরোধ করে রাখেন।
ছবি: সংগৃহীত
১১৮৭ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর সবচেয়ে বড় বাধা অতিক্রম করে নগরের প্রাচীরের ওপর ইসলামি বাহিনী চড়তে সক্ষম হয়। নগর প্রাচীরে উঠেই মুজাহিদরা ইসলামি পতাকা উড্ডীন করেন। কালিমার পতাকা উড়তে দেখে নগর রক্ষাকারী বাহিনী এ কথা বিশ্বাস করে নেয় যে, আর মুসলিম বাহিনীকে প্রতিরোধ করা সম্ভব নয়।
আসলে তারা ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গেছে। তবে তারা তাদের একগুঁয়েমি চালিয়েই যায়। লোকজন গীর্জায় জমা হয়ে প্রার্থনা করতে লাগল। পাপের কথা স্বীকার করে, নিজেদের পাথর দিয়ে বারবার আঘাত করতে থাকে এবং তারা আল্লাহর কাছে রহমতের আশা করতে থাকে। মুসলিমদের হাতে বন্দি হওয়া থেকে বাঁচতে প্রার্থনায় মগ্ন হয়।
নারীরা বিভিন্নভাবে পুরুষদের উত্তেজিত করার চেষ্টা করে। এমনকি নারীরা তাদের মেয়েদের মাথার চুল পর্যন্ত কর্তন করে দেয়। কিন্তু ক্রসেডাররা এহেন পরিস্থিতিতে মুসলমান সৈন্যদলের ওপর আক্রমণ করলে তারা নাস্তানাবুদ হয়ে যাওয়ার শঙ্কায় অস্ত্র ধরা থেকে বিরত থাকে। ২৬ রজব ৫৮৩ হিজরি ক্রসেডাররা সালাহউদ্দীন আইয়ুবী (রহ.) এর কাছে নিজেদের অস্ত্র সমর্পণ করে।
আল আকসা বিজয়
বাইতুল মুকাদ্দাস
২৭ রজব ৫৮৩ হিজরি শুক্রবার মুসলিম উম্মাহর একটি স্মরণীয় দিন। বর্বর ইহুদি ও ক্রসেডারদের হাত থেকে মুক্তি পেয়েছিল নবী-রাসূলদের পবিত্রভূমি ও আমাদের প্রথম কেবলা আল-আকসা; বাইতুল মুকাদ্দাস। এদিন নগরীর প্রাচীরে প্রাচীরে উড্ডীন করা হয় কালিমাখচিত পতাকা। বাইতুল মুকাদ্দাস বিজেতা সালাহউদ্দীন আল আইয়ুবি (রহ.) মসজিদে প্রবেশ করে সর্ব প্রথম জুমার নামাজ আদায় করেন। আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া জ্ঞাপন করেন।
ক্ষমা ঘোষণা
খ্রিষ্টানদের এমন দুঃসাহসিকতা ও লজ্জাজনক অবস্থানের পরেও সালাহউদ্দীন আইয়ুবী (রহ.) তাদের প্রতি মহানুভবতা প্রদর্শন করেছিলেন। তাদের ক্ষমা ঘোষণা করেন। খ্রিষ্টান ঐতিহাসিক লেন পোল সালাহউদ্দীন আইয়ুবী (রহ.) এর প্রশংসা করতে গিয়ে বলেন, ‘খ্রিষ্টান পাদ্রীদের মুসলিম শাসকদের কাছ থেকে মহানুভবতা শেখা উচিত’। (সালাহউদ্দীন ও ফিলিস্তিন পৃষ্ঠা ২১৬)
ছবি: সংগৃহীত
ইতিহাসে সুলতান সালাহউদ্দীন আইয়ুবী (রহ.) ও অন্যান্য মুসলিম শাসকরা মহানুভবতার অনুপম দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেছেন। দীর্ঘ ৯০ বছর পর ইসলামের তৃতীয় গুরুত্বপূর্ণ ভূমি মসজিদুল আকসায় তাকবির ধ্বনি উচ্চারিত হয়। কুব্বাতুস সাখরায় স্থাপন করা ক্রুশ চিহ্ন ভেঙ্গে ফেলা হয়। গির্জায় রূপান্তর করা মসজিদগুলোতে আবারও আজান ধ্বনিত হয়। মিম্বরগুলো সুন্দর জায়নামাজে সুসজ্জিত হয়।
সূত্র: ডেইলি-বাংলাদেশ।
জাগ্রত জয়পুরহাট