পাসপোর্ট সেবা গ্রহণ সংক্রান্ত সচেতনতামূলক বিজ্ঞপ্তি
পাসপোর্ট সেবা-সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছে মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরে অবস্থিত বাংলাদেশ হাইকমিশন। পাসপোর্ট সেবায় দীর্ঘসূত্রতা ও অনিয়ম নির্মূল করতে হাইকমিশন গত তিন বছরে গুরুত্বপূর্ণ এসব সিদ্ধান্ত নেয়। হাইকমিশন থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়েছে।
সিদ্ধান্তগুলো নিচে তুলে ধরা হলো–
১. প্রবাসীদের দীর্ঘদিনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে হাইকমিশন ই-পাসপোর্ট সেবা চালু করার জন্য স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক অনুমোদন সাপেক্ষে গত বছরের ২২ সেপ্টেম্বর আউট সোর্সিং কোম্পানির (ইএসকেএল) সঙ্গে চুক্তি সই করে। হাইকমিশনের কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে এ চুক্তি সই হয়।
২. গত ১৮ এপ্রিল ২০২৪- এ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিব কুয়ালালামপুরের সাউথগেট কমার্শিয়াল সেন্টারে আউটসোর্সিং প্রতিষ্ঠানের অফিস ভবনে আনুষ্ঠানিকভাবে ই-পাসপোর্ট সেবার উদ্বোধন করেন। এদিন থেকেই মূলত ই-পাসপোর্ট সেবা যাত্রার শুরু হয়।
৩. হাইকমিশন স্টেকহোল্ডার অ্যানালাইসিসের মাধ্যমে অনুধাবন করে যে, পাসপোর্টের আবেদনপত্র পূরণের মাধ্যমেই দালাল বা মধ্যস্বত্বভোগীদের সম্পৃক্ততার সুযোগ সৃষ্টি হয়। তাই দালালমুক্ত পাসপোর্ট পরিষেবা নিশ্চিত করতে ই-পাসপোর্টের আবেদন ফরম পূরণ, পাসপোর্ট ফি জমা, ছবি তোলা, বায়োমেট্রিক গ্রহণসহ দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার অনুমোদনের আগ পর্যন্ত সব কার্যক্রম আউট সোর্সিং কোম্পানি (ইএসকেএল) সম্পন্ন করবে বলে চুক্তি সই হয়। চুক্তির বিশেষ শর্তাবলির মধ্যে রয়েছে– সুপরিসর অবকাঠামো, স্বচ্ছ নিয়োগ প্রক্রিয়া, আইওটি ভিত্তিক রিমোট মনিটরিং ও ৩ লাখ রিংগিত সিকিউরিটি ডিপোজিট ইত্যাদি।
৪. চুক্তি অনুযায়ী সেবা (আবেদন ফরম পূরণ, পাসপোর্ট ফি ব্যাংকে জমা, ছবি তোলা, বায়োমেট্রিক ইত্যাদি) গ্রহণের বিনিময়ে সেবাগ্রহীতাকে ন্যূনতম অর্থ মালয়েশিয়ান মুদ্রায় ৩২ রিঙ্গিত বা (৭ দশমিক ৩৪ মার্কিন ডলার) সার্ভিস চার্জ দিতে হবে। এখানে উল্লেখ্য, ২০১৪ সালে পাসপোর্ট অধিদপ্তর মালয়েশিয়ায় বসবাসরত বাংলাদেশিদের আউটসোর্সিং পদ্ধতিতে এমআরপি প্রদানের বিষয়ে প্রতিটি এমআরপি ইস্যুর জন্য ঠিকাদারকে সার্ভিস চার্জ ৭৮ দশমিক ৪৮ রিঙ্গিত বা ১৮ মার্কিন ডলার নির্ধারণ করেছিল।
৫. বর্তমান চুক্তি অনুযায়ী প্রতিটি লেনদেন হবে মেব্যাংকের মাধ্যমে। আউটসোর্সিং সার্ভিস চার্জ ও সরকারি ফি প্রতিটি পাসপোর্টের অনুকূলে আলাদা-আলাদা হিসাবে জমা নেওয়া হচ্ছে। প্রতিটি স্বতন্ত্র এন্ট্রি হচ্ছে, যা ডিজিটালি ও ম্যানুয়ালি মনিটরিং বা যাচাইয়ের ব্যবস্থা রয়েছে। এ প্রক্রিয়ায় আর্থিক অনিয়ম-দুর্নীতির কোনো সুযোগ নেই, বরং সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের কারণে অধিকতর উন্নত ও স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় প্রবাসীদের অতি প্রয়োজনীয় সেবাগুলো প্রদান করা সম্ভব হচ্ছে।
৬. প্রবাসীদের পাসপোর্ট পরিষেবা হাইকমিশন ও আউটসোর্সিং কোম্পানির মধ্যে যে চুক্তি সই করা হয়েছে তা যথাযথ বাস্তবায়ন ও তদারকির জন্য হাইকমিশন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে একটি টাস্কফোর্স গঠন করেছে। এ টাস্কফোর্স যেকোনো অভিযোগ পেলেই হাইকমিশনারের অনুমোদন সাপেক্ষ ব্যবস্থা নিচ্ছে। প্রয়োজনে টাস্কফোর্স সদস্যরা নিয়মিত মনিটরিংয়ের জন্য সরেজমিনে ইএসকেএলের স্থাপনা পরিদর্শন করেন। তবে আশার কথা হচ্ছে, ই-পাসপোর্ট সেবা প্রদানে এখন পর্যন্ত তেমন অভিযোগ-অনুযোগ পাওয়া যাচ্ছে না।
৭. মহামারি কোভিড-১৯ চলাকালে বিশেষ ব্যবস্থায় সরকারি পরিষেবা নিরবচ্ছিন্ন রাখার জন্য এমআরপি পাসপোর্টের আবেদনপত্র গ্রহণের জন্য পিওএস মালয়েশিয়াকে (মালয়েশিয়া পোস্ট অফিস) দায়িত্ব দেওয়া হয়। সম্প্রতি পোস মালয়েশিয়ার মাধ্যমে গৃহীত এমআরপি আবেদন টাস্কফোর্স কর্তৃক পর্যালোচনা করে স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়েছে যে, নিরীহ প্রবাসী বাংলাদেশিদের সরলতার সুযোগ নিয়ে এমআরপিএর আবেদন গ্রহণের নামে একটি কায়েমি স্বার্থান্বেষী সুবিধাবাদী গোষ্ঠী এ ব্যবস্থার অপব্যবহার করছে। হাইকমিশন এখন থেকে পোস মালয়েশিয়ার মাধ্যমে আবেদন ফরম গ্রহণ বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
৮. ১৫ আগস্ট ২০২৪- এ প্রদত্ত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষাসেবা বিভাগের নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ হাইকমিশন প্রবাসীদের মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট (এমআরপি) পাসপোর্ট করতে নিরুৎসাহিত করছে। এর পরিবর্তে ই-পাসপোর্ট করতে উৎসাহিত করছে। মন্ত্রণালয়ের এ নির্দেশনায় বলা হয়েছে, যেসব দেশে ই-পাসপোর্ট কার্যক্রম চালু হয়েছে সেসব দেশে এমআরপির কার্যক্রম যথাসম্ভব সীমিত করতে হবে। এক্ষেত্রে যেসব আবেদনকারীর ই-পাসপোর্টের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র রয়েছে তাদের ই-পাসপোর্ট প্রদান করতে হবে। আর কেবল যাদের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নাই এবং জরুরি প্রয়োজনে অত্যাবশ্যকীয় বিবেচনায় এমআরপি পাসপোর্ট ইস্যু করবে হাইকমিশন।
৯. হাইকমিশন এই মর্মে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করছে যে, এখন থেকে আউটসোর্সিং কোম্পানি ইএসকেএলের মাধ্যমে এমআরপি আবেদন গ্রহণ করা হবে। যেখানে প্রতি আবেদন প্রক্রিয়াকরণের (আবেদন ফরম পূরণ, সরকারি ফি নেওয়া, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংযুক্তিকরণ ইত্যাদি) জন্য আরএম (আরএম ২০) সার্ভিস চার্জ নির্ধারণ করা হয়েছে। কুয়ালালামপুরে ইএসকেএল কোম্পানি তার নিজস্ব কার্যালয়ে (ই-২-২ ব্লক ই সাউথগেট কমার্শিয়াল সেন্টার জালান দুআ, অফ, জালান চ্যান সো-লিন, ৫৫২০০ কুয়ালালামপুর), অন্য শহরে (যেমন- জহুর বাহরু, পেনাং, মালাক্কা, পোর্ট ক্লাং ইত্যাদি) হাইকমিশনের মোবাইল কনস্যুলার টিমের সঙ্গেই এসকেএলের টিম যৌথভাবে এমআরপি এবং ই-পাসপোর্টের আবেদন গ্রহণ করবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে হাইকমিশন।
১০. পাসপোর্টের আবেদন ফরম পূরণ, ব্যাংকে টাকা জমাসহ পাসপোর্ট প্রাপ্তির পূর্ণাঙ্গ প্রক্রিয়ায় দালাল বা মধ্যস্বত্বভোগীর হস্তক্ষেপ করার সুযোগ নেই। ‘আগে আসলে আগে পাবেন’, এটাই হবে পাসপোর্ট প্রাপ্তির একমাত্র প্রক্রিয়া। সেবাপ্রার্থীদের যাতে অনেকক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে না হয় সে কারণে আউটসোর্সিং কোম্পানি ৪৫টি কাউন্টারের মাধ্যমে সুবিশাল অবকাঠামোতে সেবা দিচ্ছে। এ ছাড়া ১২ ঘণ্টা কল সেন্টারের মাধ্যমে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। যার হটলাইন নম্বর- +৬০৩৯২১২০২৬৭।
সূত্র: ঢাকা পোষ্ট