ডিভোর্স, নির্যাতন, সন্তানের ভরণ-পোষণ বিষয়গুলোতে নারী কোথায় যাবেন
রিক্তা ভালোবেসে বিয়ে করেন অরুণকে। এক বছর পর সন্তানের বাবা-মা হন তারা। দাম্পত্যজীবন পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে। কিন্তু সুখ বেশি দিন স্থায়ী হয়নি। ১২ বছর সংসার করার পর স্বামী পাঠান তালাকের নোটিশ। এগারো বছরের সন্তান শিলাকে নিয়ে মুখোমুখি কঠিন বাস্তবতার। সন্তানকে নিয়ে আদালতে ঘুরছেন রিক্তা।
রিক্তার মতো এমন কাহিনী অনেকের। কখনো পুরুষ ভাঙ্গছেন সংসার, কখনো বা নারী। সংসার জীবনের তিক্ততা গড়াচ্ছে আদালতে।
আলগা হচ্ছে বন্ধন। বাড়ছে দাম্পত্য কলহ,ভাঙছে সুখের সংসার সেই হিসেবে বেড়েই চলেছে বিবাহ-বিচ্ছেদের ঘটনা। অর্থসম্পদ, যৌতুক, পরকীয়া, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সহ নানা কারনেই ডির্ভোসের সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন নারী-পুরুষরা। তবে বর্তমানে কোন তিক্ত সম্পর্ক , ভায়োলেন্সপূণ সম্পর্র্ক টিকিেিয় রাখার চেয়ে ডিভোর্স ভালো বলে মনে করছেন অনেকে।
নারী নির্যাতনের শিকার হলে কোথায় যাবেন, কি করবেন।
বাসায় বা বাড়িতে নির্যাতনের শিকার হলে এবং থানায় যেতে না চাইলে দ্রুত জাতীয় জরুরী সেবা সহায়তা কেন্দ্র ৯৯৯ এ ফোন করা যেতে পারে।
পরবর্তী ধাপ হিসেবে থানায় মামলা করা যেতে পারে নির্যাতনকারীর বিরুদ্ধে। থানায় মামলা করতে হলে মেডিক্যাল সার্টিফিকেট নিয়ে যেতে হবে।
থানায় মামলা না নিলে আদালতে মামলা করা যেতে পারে। সেক্ষেত্রে একজন আইনজীবীর মাধ্যমে মামলাটি করা যেতে পারে।
যদি কারো আর্থিক সংকট থাকে সরকারী আইনী সহায়তা কেন্দ্রের অফিসে যাওয়া যেতে পারে বিনামূল্যে আইনী সেবা পাওয়ার জন্য। আইন সহায়তা কেন্দ্র প্রতিটি জেলা আদালতে থাকে। সেখানে নিজের অভিযোগ বর্ননা করে সহায়তা চাইলে আইনীবী নিয়োগ করে বিনামূল্যে আইন সহায়তা পাওয়া যায়।
এছাড়াও কিছু বেসরকারী সংগঠন আছে যারা নারী নির্যাতন নিয়ে আইনী সেবা দিয়ে থাকে যেমন , মহিলা আইনজীবী সমিতি, আইন ও সালিশ কেন্দ্র, সরকারী প্রতিষ্ঠান জাতীয় মানবাধিকার কমিশন এই সংগঠনগুলেঅ সহায়তা করে থাকে।
বিবাহ-বিচ্ছেদের পরে ভরণপোষণ:
যদি কোনো কারণে স্বামী-স্ত্রীর মাঝে বিবাহ-বিচ্ছেদ ঘটেই যায় তাহলে বিবাহ-বিচ্ছেদের পরও স্ত্রী কিছুদিন ভরণপোষণ পাওয়ার অধিকারী হবেন। যেদিন থেকে বিবাহ-বিচ্ছেদ কার্যকরী হয় সেদিন থেকে ৯০ দিন। অর্থাৎ ৩ মাস ভরন পোষন পাবেন। তবে ডিভোর্স যেই দিক পরিশোধ করতে হবে দেনমোহর। স্বামী মারা গেলেও স্বামীর সম্পত্তির থেকে স্ত্রীর দেনমোহর পরিশোধ করতে হবে বলে জানান আইনজীবী ইশরাত হাসান।
সন্তানের ভরন-পোষন
ডিভোর্সে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে সন্তানরা। সেই সন্তানদের ভরন পোষন নিয়ে আইনী ব্যাখ্যা জানবো বিস্তারিত। মুসলিম পারিবারিক আইন অনুযয়ী, প্রায় সব ক্ষেত্রে বাবা সন্তানের প্রকৃত আইনগত অভিভাবক। এই আইনের আওততায় সন্তানের অভিভাবকত্ব এবং জিম্মাদারিকে আলাদাভাবে বিবেচনা করা হয়।
আইনজীবী ইশরাত হাসান বলেন, সন্তানদের ভরণপোষণ দেয়ার দায়িত্ব আইনগতভাবে বাবার। সাবালক হওয়া পর্যন্ত ছেলেকে এবং বিয়ের পূর্ব পর্যন্ত মেয়েকে বাবা ভরণপোষণ দিবেন। কোনো অসুস্থ ও অক্ষম সন্তান থাকলে তাদের ভরণপোষণও দিবেন বাবা। সাবালকত্ব অর্জন করার পরেও যদি সন্তানরা নিজ ভরণপোষণ যোগাতে ব্যর্থ হন তবে আইন অনুসারে ঐ সন্তান বাবার কাছে ভরণপোষণ দাবি করতে পারবে। তবে এক্ষেত্রে বাবা ভরণপোষণ দিতে বাধ্য নন। মা যখন সন্তানের জিম্মাদার তখনও বাবা ভরণপোষণ দিবেন।
সূত্র: একুশে ETV