বৃহস্পতিবার   ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ || ৩ আশ্বিন ১৪৩১

জাগ্রত জয়পুরহাট

প্রকাশিত : ১৮:২৭, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৪

জনসচেতনতা

৫৬০টি মডেল মসজিদ নির্মাণে সৌদি অনুদান ৮ হাজার কোটি টাকা - দাবিটি সঠিক নয়

৫৬০টি মডেল মসজিদ নির্মাণে সৌদি অনুদান ৮ হাজার কোটি টাকা - দাবিটি সঠিক নয়
সংগৃহীত
সদ্য ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকার ২০১৪ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় একটি করে উন্নত মসজিদ নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দেয়। পরের বছর সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মোট ৫৬০টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সংস্কৃতি কেন্দ্র স্থাপন (১ম সংশোধিত) প্রকল্প অনুমোদন দেন। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ওয়েবসাইট সূত্রে জানা যায়, এ প্রকল্পের জন্য ব্যয় ধরা হয় ৮ হাজার ৭২২ কোটি টাকা। প্রকল্পটির মেয়াদ ছিল ২০১৭ সালের এপ্রিল থেকে ২০২০ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। সম্প্রতি ফেসবুকে দাবি করা হচ্ছে, এই মডেল মসজিদগুলো নির্মাণে সৌদি আরব থেকেই ৮ হাজার কোটি টাকা অনুদান এসেছে।

 

 

 

 

 

৫৬০টি মডেল মসজিদ নির্মাণে সৌদি আরব ৮ হাজার কোটি টাকা অনুদান দিয়েছে দাবিতে গুজব। ছবি: ফেসবুক

৫৬০টি মডেল মসজিদ নির্মাণে সৌদি আরব ৮ হাজার কোটি টাকা অনুদান দিয়েছে দাবিতে গুজব। ছবি: ফেসবুক দাবিটির সত্যতা যাচাই করে দেখেছে আজকের পত্রিকার ফ্যাক্টচেক বিভাগ। 

প্রাসঙ্গিক কি–ওয়ার্ড অনুসন্ধানে বিবিসি বাংলায় ২০১৮ সালের ২৭ জুন প্রকাশিত মডেল মসজিদ প্রকল্প নিয়ে একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। সেটা থেকে জানা যায়, দেশে সৌদি অর্থায়নে ৫৬০টি মডেল মসজিদ তৈরির যে পরিকল্পনা ছিল, তার অর্থায়ন করতে যাচ্ছে সরকার নিজেই। দেশের ইতিহাসে ধর্মীয় খাতে এককভাবে সর্বোচ্চ ব্যয়ের প্রকল্প এটিই। শুরুতে এই মডেল মসজিদ তৈরির প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয় ৯ হাজার ৬২ কোটি টাকা, এর মধ্যে সৌদি সরকারের অনুদান হিসেবে দেবার কথা ছিল ৮ হাজার ১৭০ কোটি টাকা। কিন্তু ওই সময় একনেকে যে সংশোধিত প্রকল্প পাস করা হয়েছে, তার ব্যয় ধরা হয় সাড়ে ৮ হাজার কোটি টাকার বেশি। পুরো ব্যয়ই সরকার থেকে বহন করা হবে। এটি ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আওতায় ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাস্তবায়ন করছে।

দেশে সৌদি অর্থায়নে যে ৫৬০টি ‘মডেল মসজিদ’ তৈরির যে পরিকল্পনা ছিল, তার অর্থায়ন সরকার নিজেই করেছে। ছবি: বিবিসি বাংলা

দেশে সৌদি অর্থায়নে যে ৫৬০টি ‘মডেল মসজিদ’ তৈরির যে পরিকল্পনা ছিল, তার অর্থায়ন সরকার নিজেই করেছে। ছবি: বিবিসি বাংলা সৌদি অর্থায়ন প্রসঙ্গে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের তৎকালীন মহাপরিচালক সামীম মোহাম্মদ আফজাল বিবিসি বাংলাকে বলেন, ‘তারা বলেছিল টাকা দেবে, কিন্তু সেটা এখনো হাতে না পাওয়ায় সরকার কাজ শুরু করতে যাচ্ছে। এটা আল্লাহর ঘরের কাজ, পরে কেউ শরিক হতে চাইলে হবে, তাতে বাধা নেই। কিন্তু মসজিদের কাজ, আমরা তো ফেলে রাখতে পারি না।’

একই প্রসঙ্গে তৎকালীন পরিকল্পনামন্ত্রী আহম মুস্তফা কামালের বরাত দিয়ে বিবিসি বাংলা জানায়, সৌদি অর্থায়ন না পাওয়ায় সরকার নিজেই এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছে। এ সংক্রান্ত সংশোধিত প্রকল্প পাস হয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি বা একনেক সভায়।

নিউজ পোর্টাল বিডিনিউজ ২৪ এ ২০১৮ সালের ২৬ জুন প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৬ সালের ৩ থেকে ৬ জুন সৌদি সফরের সময় সেদেশের বাদশাহকে বাংলাদেশের উপজেলা পর্যায়ে ইসলামিক সাংস্কৃতিক সেন্টার স্থাপনের প্রস্তাব দিলে সৌদি বাদশাহ এতে অর্থায়নের আগ্রহ দেখান। পরে ২০১৭ সালের ২৫ এপ্রিল অনুষ্ঠিত একনেক সভায় ওই প্রকল্প চূড়ান্ত অনুমোদন পায়। ওই সময় সৌদি আরব থেকে ১০০ কোটি ডলার অনুদান আসছে ধরে প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয় ৯ হাজার ৬২ কোটি টাকা। পরে সৌদি সরকার ওই অর্থ দিতে না চাওয়ায় জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় প্রকল্পটির সংশোধনী অনুমোদন দেওয়া হয়। ৩৪০ কোটি টাকা কমিয়ে সংশোধিত প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৮ হাজার ৭২২ কোটি টাকা।

ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ৫৬০টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র স্থাপন শীর্ষক প্রকল্পের স্টিয়ারিং কমিটির সভার কার্যবিবরণী। ছবি: ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়

ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ৫৬০টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র স্থাপন শীর্ষক প্রকল্পের স্টিয়ারিং কমিটির সভার কার্যবিবরণী। ছবি: ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় পরে আরও খুঁজে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ৫৬০টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র স্থাপন শীর্ষক প্রকল্পের স্টিয়ারিং কমিটির সভার কার্যবিবরণী পাওয়া যায়। ২০১৮ সালের ১২ জুন অনুষ্ঠিত এ সভার কার্যবিবরণী থেকেও একই তথ্য পাওয়া যায়। প্রকল্পটি সম্পর্কে স্টিয়ারিং কমিটির সভার কার্যবিবরণীতে বলা হয়, প্রকল্পটি সম্পূর্ণ বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়নে বাস্তবায়িত হবে। এর জন্য প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয় ৮ হাজার ৭২২ কোটি টাকা।

প্রসঙ্গত, ২০২১ সালের জুনে ৫৬০টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের প্রথম ৫০টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র উদ্বোধন করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সর্বশেষ

জনপ্রিয়

সর্বশেষ