রোববার   ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ || ২৩ ভাদ্র ১৪৩১

জাগ্রত জয়পুরহাট

প্রকাশিত : ১৩:০২, ৭ জুন ২০২৪

প্রকৃতিতে হেসে উঠেছে বর্ষাদূত কদম ফুল

প্রকৃতিতে হেসে উঠেছে বর্ষাদূত কদম ফুল
সংগৃহীত

প্রকৃতিতে এখন চলছে গ্রীষ্মকাল। আর কদিন পরেই প্রকৃতি তার গায়ে পরে নেবে বর্ষাকাল। ষড়ঋতুর মধ্যে বর্ষাকাল যেন সেরা ঋতু আবহমান বাংলার। আর এই বর্ষাকে স্বাগত জানাতে বর্ষার আগমনী বার্তা নিয়ে কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়ার প্রকৃতিতে ফুটেছে মন ভোলানো সৌন্দর্য নিয়ে বর্ষাদূত কদম ফুল। চিরচেনা মিষ্টি একটা গন্ধে মেতে উঠেছে গ্রামীণ সবুজ শ্যামল প্রকৃতি। কদম ফুলের সতেজ নির্মল সৌন্দর্য আর মোহনীয় ঘ্রাণ প্রকৃতিপ্রেমীসহ সকলের মনে সৃষ্টি করেছে ভিন্ন এক সম্মোহনী অনুভূতি।

বাংলা কবিতা ও গানেও সমভাবে সমাদৃত হয়েছে বর্ষাকাল ও কদম। বর্ষার সঙ্গে কদম ফুলের যেন এক নিবিড় সম্পর্ক প্রাকৃতিকভাবেই আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে আছে। তাইতো পল্লীকবি জসিম উদ্দিন লিখেছিলেন, 'প্রাণ সখিরে...ঐ শোন কদম্বতলে বংশী বাজায় কে।' বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছিলেন, বাদল-দিনের প্রথম কদম ফুল করেছ দান, আমি দিতে এসেছি শ্রাবণের গান।'

জানা গেছে, মূলত বর্ষা ঋতুতেই প্রকৃতি রাঙিয়ে ফোটে বর্ষাদূত কদম ফুল। তবে জলবায়ু পরিবর্তনের ছোঁয়া পড়েছে ষড়ঋতুর এই দেশের প্রকৃতিতেও। কদম ফুল সাধারণত আষাঢ় মাসে দেখা যাওয়ার কথা থাকলেও প্রকৃতিতে জৈষ্ঠ্য মাসেই শোভা পাচ্ছে কদম ফুল। কদম এসেছে সংস্কৃত নাম কদম্ব থেকে। এই ফুলের আরেক নাম নীপ। এছাড়াও এ ফুলের আরও কতগুলো নাম রয়েছে, সর্ষপ, সুরভি, পুলকি, মেঘাগমপ্রিয়, বৃত্তপুষ্প, সিন্ধুপুষ্প,ললনাপ্রিয়, মঞ্জুকেশিনী ইত্যাদি। এ দেশের ফুলগুলোর মধ্যে কদম ফুল অন্যতম। এই গাছের উচ্চতা ৪০ থেকে ৫০ ফুট পর্যন্ত হতে পারে। কদম গাছের বৈজ্ঞানিক নাম Anthocephalus indicus । এর আদি নিবাস ভারতের উষ্ণ অঞ্চল, মালয় ও চীনে। এই গাছের পাতা লম্বা, চকচকে উজ্জ্বল সবুজ। শীতকালে এই গাছের পাতা ঝরে গেলেও বসন্ত এলেই এই গাছে পাতা নতুন পাতা গজাতে শুরু করে। কদম ফুল গোলাকার। ফুলটিকে একটি ফুল মনে হলেও আসলে এটি অসংখ্য ফুলের একটি গুচ্ছ। এর ভেতরে মাংসল পুষ্পাধার রয়েছে, যাতে হলুদ রংয়ের ফানেলের মতো নরম সাদা পাপড়িগুলো আটকে থাকে। কদম গাছের ফল বাদুড় ও কাঠবিড়ালির প্রিয় খাদ্য। এরাই ভিন্ন ভিন্ন জায়গায় এই গাছের বংশবিস্তারে সাহায্য করে থাকে।

উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, সড়কের পাশে, মেঠোপথের ধারে, বসতবাড়ির আশপাশে, পুকুর ও দিঘির পাড়ের কদম গাছ ছেয়ে আছে মিষ্টি গন্ধেভরা তুলতুলে কদম ফুলে। এসব ফুলের মন ভোলানো সৌন্দর্যে আকৃষ্ট হচ্ছেন শিশুরাসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ। শিশুরা এসব ফুল তাদের খেলার অনুষঙ্গ হিসেবেও ব্যবহার করছে। কিশোরীদের চুলের খোপা ও বেনিতেও শোভা পাচ্ছে বর্ষাদূত কদম ফুল। উঠতি বয়েসী কিশোর কিশোরীদের হাতেও শোভা পাচ্ছে এই ফুল। প্রতিটি সড়ক দিয়ে যেতে যেতে কদম ফুলের গন্ধ ও সৌন্দর্য উপভোগ করছেন সবাই। কদম ফুলের গন্ধে যেনো গ্রামবাংলার চিরচেনা গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। চকচকে উজ্জ্বল সবুজ পাতার ফাঁকে ফাঁকে ফোটে থাকা কদম ফুলের সৌন্দর্যে প্রকৃতিতে এক নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে।

ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী ফৌজিয়া ইসলাম কালবেলাকে বলেন, রূপ, রঙ ও গন্ধে দৃষ্টিনন্দন ফুল কদম। এই ফুল অন্যান্য ফুলের মতো নয়, এটি সম্পূর্ণ একটি ভিন্নধর্মী ফুল। এই ফুলের হলুদ ও সাদা পাপড়ি আর ভেতরের গোলাকার বলের মতো অংশটি নিয়েই ফুলটির সৌন্দর্য ফুটে উঠে। এ ফুলের সৌন্দর্য অন্য ফুলের তুলনায় সম্পূর্ণ আলাদা। প্রতি বছরই বর্ষা এলে কদম ফুলের প্রেমে পড়তে একরকম বাধ্যই হতে হয়।

প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ কালবেলাকে বলেন, মূলত বর্ষাকালে প্রকৃতিতে কদম ফুল ফোটে। এই ফুলের সঙ্গে গ্রামবাংলার এক নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। তবে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে এখন অসময়েও কদম ফুল ফুটতে দেখা যায়। এই উপজেলার বিভিন্ন জায়গায় কদম ফুল ফুটেছে। এ ফুলের মধ্যে যেন বাঙালি বাঙালি আছে। সড়কে যাতায়াতের সময় হঠাৎ হঠাৎ এ ফুলের গন্ধ ভেসে আসে।

ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ইউনানি চিকিৎসক ডা. সোহেল রানা কালবেলাকে বলেন, আদিকাল থেকেই কদম গাছের বিভিন্ন অংশ ও এর ফুল প্রাকৃতিক শোভাবর্ধনের পাশাপাশি মানবদেহের নানা রোগের চিকিৎসায় ভেষজ ঔষধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।

তিনি বলেন, ভেষজ ঔষধিগুণে ভরা কদম পাতা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য উপকারী। এর ব্যবহারে ডায়াবেটিস রোগীদের শরীরে ইনসুলিনের উৎপাদন নিয়ন্ত্রণে রাখে। এটি ব্যথানাশক হিসেবেও ব্যবহৃত হয়। কদমের ছাল জ্বরের ওষুধ হিসেবেও ব্যবহৃত হয়। পায়ের তালু জ্বলা, ব্রণসৃষ্ট ক্ষত ও গ্রন্থিস্ফীতি রোগে এর ব্যবহার প্রাচীনকাল থেকেই চলে আসছে। এ ছাড়া কদম ফুল সেদ্ধ করা পানি দিয়ে কুলকুচি করলে মুখের দুর্গন্ধ দূর হয়।

সূত্র: কালবেলা

সর্বশেষ

জনপ্রিয়

সর্বশেষ